দুর্নীতির খনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ভূমি অফিস। এই অফিসের নায়েব আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে বেপরোয়া দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি বেতনের বাইরে তার দৈনিক ‘উপরি’ (ঘুষ) অন্তত লাখ টাকা, মাসে আয় ৩০ লাখ টাকা। তিনি নিজেকে ভূমি সচিবের আত্মীয় পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান। কয়েক বছরে ফুলেফেঁপে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক।
এদিকে আবদুল জলিলের আপসারণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। দুর্নীতিবাজ নায়েব জলিল ও মজিবরকে অপসারণ করা না হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে আবদুল জলিলের কাছে জানতে চাইলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, যদি অন্য কেউ অবৈধ উপায়ে কারও কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আর আমাকে যদি কেউ ইচ্ছে করে দেয়, তখন তো নিতে হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সব কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া আছে যেন সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে তারা কাজ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নায়েব জলিল ভূমি সচিবের আত্মীয় পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলার এলএ শাখার এক কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠজন দাবি করে সুবিধা লুটতে ব্যস্ত থাকেন।
তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি), সার্ভেয়ারসহ কাউকে পরোয়া করেন না। কয়েক বছরে অবৈধ পন্থায় অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল এলাকায় রয়েছে তার ছয়তলা আলিশান বাড়ি, শরীয়তপুরের নিজ এলাকায় দোতলা বাড়ি। রয়েছে কয়েক বিঘা জমি। দামি গাড়ি হাঁকান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গোলাকান্দাইল ভূমি অফিসের নায়েব আবদুল জলিলের নামজারি, ‘খ’ তফসিলসহ বিভিন্ন কাজে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। নায়েব জলিলকে শতাংশপ্রতি দিতে হয় ৩ হাজার টাকা করে। এভাবে দৈনক অবৈধ আয় অন্তত লাখ টাকা।
এ টাকা জলিল ও সহকারী নায়েব মজিবর ভাগাভাগি করে নেন। আর সাধারণ নামজারি শতাংশপ্রতি তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা। মিস কেস তদন্তে প্রতিবেদনের জন্য গুনতে হয় ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা।
সোমবার সকালে ভূমি অফিসের সামনে কথা হয় ভুক্তভোগী মকবুল হোসেনের সঙ্গে। বলেন, ‘একটা ১০ শতাংশের ‘খ’ তফসিলের কাম লইয়া আইছিলাম নায়েব জলিলের কাছে।
উনি আমার কাছে শতাংশপ্রতি ৫০ হাজার টাকা চান। ১০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলতেই বকাঝকা করে রুম থেকে বের করে দেন।’
আরেক ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব মনির হোসেন। এসেছেন নাগেরবাগ এলাকা থেকে। জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভের সুরে বলেন, এই দেশে কি আইনকানুন নাই।
একটা মিস কেসের রিপোর্ট (প্রতিবেদন) দেয়ার জন্য জলিল চাইলেন এক লাখ টাকা। অথচ আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে।
কায়েতপাড়ার রজ্জব আলী মিয়া বলেন, আমি একটা খারিজের কাজ নিয়ে এসেছি। কাগজপত্র ঠিক আছে। আবদুল জলিল দাবি করলেন ১৫ হাজার টাকা। এরকম অভিযোগের কোনো শেষ নেই।
ভূমি অফিসের নায়েবের মাসিক আয় ৩০ লাখ টাকা!
Reviewed by বার্তা কক্ষ
on
June 23, 2018
Rating:
Reviewed by বার্তা কক্ষ
on
June 23, 2018
Rating:

No comments: