পৃথিবীতে কখনো কোনো সরকার হত্যা করে পার পায়নি: কাদের সিদ্দিকী

তকাল আমার মেয়ে কুঁড়ি লন্ডন থেকে ফিরেছে। ওকে আনতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ বিমানের BG202 কখনো ঠিক সময়ে ঢাকা আসে না। 

কখনো দু-এক বার সিলেটে এলেও সেখান থেকে ডিলে শুরু হয়। গতকাল সিলেট বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল।

প্রথম বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর মুভমেন্ট আছে। তাই ওড়ার অনুমতি পাচ্ছে না। হেলিকপ্টারে চড়তে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুভমেন্টের কারণে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

 প্রধানমন্ত্রী আকাশে থাকলে অন্য হেলিকপ্টার চালাতে দেওয়া হয় না। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমানের জন্য যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর

চলাচলে বাধা তা জানা ছিল না। পরে জানলাম প্রধানমন্ত্রীর জন্য নয়, থাইল্যান্ডের রাজকুমারী এসেছেন। তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

 ভিআইপিতে যদিও গরম ছিল না। কিন্তু রাস্তাঘাটে প্রচণ্ড গরম। যত দেরিই হোক মেয়েটা ভালোভাবে এসেছে সেজন্য পরম করুণাময় আল্লাহর প্রতি শত কোটি শুকরিয়া।

দেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এর মধ্যেই শতাধিক মানুষ মরে গেছে। তাদের কে অপরাধী, কে অপরাধী নয়— বিচারের সুযোগ আমাদের হাতে আর নেই।

 মাদকে দেশ ছেয়ে গেছে। মাদকের করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হতে যত ত্যাগ স্বীকারের প্রয়োজন জাতি তা করতে প্রস্তুত। কিন্তু তাই বলে নির্বিচারে মানুষ হত্যা কেউ মেনে নেবে না।

অভিযান চালিয়ে যাকেতাকে হত্যার কারণে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে। সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিন্তু প্রমাণ নেই।’ 

তাহলে যাদের এ কদিন হত্যা করা হয়েছে তাদেরও তো অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়েছে। প্রমাণ থাকলে আইন-আদালত হতো, গুলি করে হত্যা করা

হতো না। জাতীয় অনেক পত্রিকায় বদির গোষ্ঠীর কে কোথায় কতটি মাদক ব্যবসার ঘাঁটি পরিচালনা করেন তার বিবরণ দেখলাম। 

বদির সব আত্মীয়ই যে মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী নন সে তো এখন শুনছি মো. একরামুল হকের হত্যার প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ, পত্রপত্রিকা সব জায়গায় আলোচিত হচ্ছে একরাম একজন

হতদরিদ্র ভালো লোক ছিলেন। তিনি প্রায় সময়ই বদির নাহক কাজের প্রতিবাদ করতেন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কখনো এক কথা বলে না। 

কিন্তু একরামের ব্যাপারে সবাই তাকে ভালো বলছে। এখন তাকে হত্যার কী হবে, কার কাছে তার পরিবার বিচার পাবে? পৃ থিবীতে কখনো কোনো সরকার হত্যা করে পার পায়নি। বেনজীর বলেছেন,

‘যুদ্ধ চলছে, যুদ্ধ চলবে।’ বলা খুবই সোজা। নিরস্ত্র মানুষকে গুলি করে মারার নাম যুদ্ধ নয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বেনজীর কতটুকু ছিলেন জানি না। 

হানাদারদের মেশিনগানের গুলির আওয়াজে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তাদের গায়ে গুলি লাগার প্রয়োজন পড়েনি। পত্রপত্রিকায় দেখছি মাদকের রাঘব-বোয়ালরা ইতিমধ্যেই গা ঢাকা দিয়েছে।

কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এসব সত্য হলে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুতেই ব্যর্থ হয়েছে। মাদকের সঙ্গে ছোট থেকে বড় অনেকেই জড়িত। 

তাই চুনোপুঁটি ধরে ধরে হত্যা করে ক্ষমতাবানদের বেঁচে যাওয়ার কোনো নীলনকশা নয় তো? প্রশ্ন আরও অনেক। মাদকের পয়সা সর্বত্র বিস্তৃত। সেসব জানাজানির হাত থেকে বেঁচে যেতে

নিচের সব কেটে ফেলার এ কোনো প্রয়াস কিনা? অথবা আসল লোকদের নাম জানাজানি হয়ে যেতে পারে এজন্য দুশমনদের কচুকাটা করা? এমনি কত যে প্রশ্ন মানুষের মনে। 

সরকার বলছে, তাদের কাছে থাকা তালিকা ধরে ধরে অভিযান করা হচ্ছে। তাহলে কি তালিকায় যারা আছে তাদের হত্যা করা হবে, আর সে হত্যার বিচার হবে না!

এ সরকারের আমলে এসব হত্যার বিচার নাও হতে পারে আবার হতেও পারে। কিন্তু এ কথা সত্য, এ সরকারই শেষ সরকার নয়, আজ অথবা কাল নতুন সরকার আসবে।

 তারা এর চাইতেও খারাপ আবার ভালোও তো হতে পারে। তাই সবার সাবধান হয়ে চলা উচিত। কোনো বেপরোয়ার জন্য কখনো পরিণতি ভালো হয় না। একটাও ভালো

নিদর্শন নেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। আমি খুবই নিবিড়ভাবে ভারতের মহীয়সী নারী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর উত্থান-পতন নিয়ে লেখাপড়া করেছি। 

’৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ভারতীয় মানসপটে তাকে মা দুর্গা বা দেবী পার্বতীর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ইন্দিরা গান্ধীকেও জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে জনতা

পার্টির কাছে পরাজিত হতে দেখেছি। তাই ক্ষমতা কোনো চিরস্থায়ী কিছু নয় এটা আমার চাইতে খুব বেশি ভালো করে কেউ জানে না। 

বর্তমান মাদকবিরোধী অভিযানে যদি জাতীয় সম্পৃক্ততা চাওয়া হয় তাহলে যত কষ্টই হোক আইনের মধ্যে থাকতে হবে। সঠিক বিচার এবং আইনের শক্তির কাছে বুলেট কিছুই না। একটি বুলেট একটি জীবন নষ্ট

করতে পারে। কিন্তু কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। যারা বুলেট ব্যবহার করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের জীবন নষ্ট করে তাদের ভেবে দেখতে বলব তারা যত ক্ষমতাবানই হোন একটি পিঁপড়ার জীবন দিতে পারবেন না। 

তাহলে এত দেমাক কেন। আর যারা এসব করেন তারা নিজের গরিমা দেখালে এ দুনিয়াতেই একই রকম শাস্তি পাবেন এটা

দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি। সারা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সময় থাকতে সাবধান হোন। কার লেখাতে যেন পড়েছিলাম, 

মুক্তিযুদ্ধের সময় এক পাকিস্তানি অফিসার ১৪ হাজার বাঙালি হত্যা করে ভারসাম্য হারিয়ে হাসপাতালে ছিল। মৃত্যুর মিছিল সবসময় তাকে তাড়া করত। কখনো ঘুমাতে দিত না। ওভাবেই ধাবমান মৃত্যু মিছিলের ভয়ে

একদিন তাকে চলে যেতে হয়েছে। এত বড় যুদ্ধ গেছে যুদ্ধের বাইরে একটা পাতা নষ্ট হোক চিন্তা করিনি। চোখে দেখে একটা পিঁপড়ার গায়ে পা ফেলিনি। 

এখনো যখন গ্রামের বাড়িতে কোনো গাছের গোড়া পরিষ্কার করি, ঢাকার বাসায় এ-গাছ ও-গাছের পরিচর্যা করি তখন ভীষণ ভালো লাগে। তাই বলছি, হত্যা কোনো সমাধান নয়। হত্যার

মনোভাব নিয়ে কেউ কোনো কাজ করে কোনো দিন সফল হয়নি। হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা যায়, সিংহাসন দখল করা যায়। কিন্তু সফলতা অর্জন করা যায় না। 

মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে হত্যার কী প্রয়োজন। ট্যাংকের পানির লাইন বন্ধ করে দিলে পানি পড়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ইয়াবার রাস্তা বন্ধ করে দিলে ব্যবসার কোনো

প্রশ্নই আসবে না। কেউ কেউ তো এও বলার চেষ্টা করছে, নেশার দাম বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ অভিযান নয় তো। কায়কারবার দেখে অস্বীকার করি কী করে।

 বহু বছর আগে এক গল্পে পড়েছিলাম, এক নৌবন্দরকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়েছিল। উজানের এক সওদাগরের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষ দুর্ব্যবহার করায় হিমালয়ের কাছাকাছি

সে নদীর মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিল। কয়েক বছরেই সে বন্দর মরে শেষ হয়ে গিয়েছিল। নেশার লাইন ঘুরিয়ে দিতে পারলে সেই একই অবস্থা হতে পারে। তাই যেখানে গোড়ায় গলদ সেখানে মাথায় পানি না ঢেলে গোড়া খুঁজে বের করা দরকার।

যেভাবে হত্যা করা হচ্ছে এর নিন্দা ছাড়া আর কিছু করা যায় না। হত্যা বন্ধ করে মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্তদের আইনের হাতে তুলে দিন। 

নিজেরা জড়িত না থাকলে দেখবেন আইনের হাত কত শক্ত, কত লম্বা। লেখক- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, উৎস- বিডি প্রতিদিন,ৃ
পৃথিবীতে কখনো কোনো সরকার হত্যা করে পার পায়নি: কাদের সিদ্দিকী পৃথিবীতে কখনো কোনো সরকার হত্যা করে পার পায়নি: কাদের সিদ্দিকী Reviewed by বার্তা কক্ষ on June 15, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.