ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনের আগেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার করা আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হচ্ছে।
আগামী রবিবার ওই আপিলসহ মোট চারটি আপিলের ওপর শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন জানাবে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী
এই আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছেন দুদক কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, আপিল বিভাগ ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে
নির্দেশনা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা হাইকোর্টের জন্য বাধ্যতামূলক। এখানে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। সেই হিসেবে রবিবার কোর্ট খোলার দিনই বিচারপতি এম. ইনায়েতুর
রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানাব। এদিকে আপিল বিভাগের রায়ের এই নির্দেশনা পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ পিটিশন দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি
চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। তার অন্যতম কৌঁসুলি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এম মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, আপিল নিষ্পত্তির জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সর্বোচ্চ
আদালত তা বৈষম্যমূলক। এ ধরনের নির্দেশনা অন্য কোনো মামলায় ইতিপূর্বে দেওয়া হয়নি। আর এ কারণেই এই বেঁধে দেওয়া সময়সীমার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রিভিউ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। রায়ে
বিএনপি চেয়ারপার্সন ছাড়াও তার ছেলে তারেক রহমানসহ আরো পাঁচ জনকে দশ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থ দণ্ড দেয় আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন খালেদা জিয়া। আপিলে নিম্ন আদালতের
দেওয়া সাজা বাতিল করে তাকে বেকসুর খালাস দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি জামিনও চান তিনি। গত ১২ মার্চ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত
হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয়। একইসঙ্গে উক্ত সময়ের মধ্যে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই জামিনের বিরুদ্ধে
রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আপিল করে। গত ১৬ মে ওই আপিল খারিজ করে দিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখেন। পাশাপাশি সাজার বিরুদ্ধে
তার করা আপিল ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে নির্দেশনা দেয় আপিল বিভাগ। গত ১১ জুন আপিল বিভাগের রায়ের অনুলিপি প্রকাশ পায়; কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ চলায় আগামী ২৪ জুন
হাইকোর্টে আপিল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামলা সংশ্লিষ্ট একাধিক আইনজীবী জানান, সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার ফলে
যথাসময়েই হাইকোর্টকে আপিল নিষ্পত্তি করে রায় প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই খালেদা জিয়ার আপিলের ওপর রায় আসবে উচ্চ আদালত থেকে। ওই রায়েই
জানা যাবে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রইল কিনা। শুনানি হবে চার আপিলের-বিএনপি চেয়ারপার্সন ছাড়াও হাইকোর্টে শুনানি হবে দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আরো দুই আসামির আপিলের। এরা
হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদ। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুইজনই দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। ওই সাজার বিরুদ্ধে
আপিল করেছেন তারা। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে দণ্ডিতদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি
চেয়ারপার্সনের সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না— এই মর্মে রুল জারি করে হাইকোর্ট। ওই তিন আপিলের সঙ্গে এই রুলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন,
এই চারটি আপিলের ওপর শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করা হবে। এদিকে আপিল শুনানির জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন উভয় পক্ষের আইনজীবীরা।
ইতোমধ্যে তারা পেপারবুক সংগ্রহ করেছেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে। পর্যালোচনা করছেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।- ইত্তেফাক
জাতীয় নির্বাচনের আগেই নিষ্পত্তি হচ্ছে খালেদা জিয়ার আপিল!
Reviewed by বার্তা কক্ষ
on
June 21, 2018
Rating:
