জামায়াতে ইসলামী: "পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার"

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, পদত্যাগ করা জামায়াতে ইসলামীর যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার।

মানে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে কেউ যে কোন সময় পদত্যাগ করতে পারেন। মিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সেটাই করেছেন। এবং এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেই তারা জানিয়েছেন।

বিকেলে দলের পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল ডা শফিকুর রহমান। ওয়েবসাইটে একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে এই পদত্যাগের বিষয়ে তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

তবে দলটির বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা ব্যক্তিগতভাবে কেউই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজী হননি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের এই পদত্যাগের ঘটনায় তারা ব্যথিত এবং মর্মাহত। সেইসঙ্গে দলের জন্য মিস্টার রাজ্জাকের অতীতের সব অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

মিস্টার রাজ্জাক প্রায় তিন দশক ধরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি দলটির একজন সিনিয়র পর্যায়ের সদস্য ছিলেন।

ওই বিবৃতিতে এই বিষয়গুলো তুলে ধরে তার এই পদত্যাগে দু:খ প্রকাশ সেইসঙ্গে সুস্বাস্থ্য কামনা করা হয়েছে। এবং ভবিষ্যতে দলের নেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আগের মতোই অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

জামায়াতের ভেতরে কয়েকটি ইস্যুতে বেশ আগে থেকেই একটা মতবিরোধ চলে আসছিল। একটি হল দলের নাম পরিবর্তন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে সামাজিক সংগঠন হিসেবে বেশি সক্রিয় হওয়া এবং আরেকটি হল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর নেতিবাচক ভূমিকার জন্য দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়া সেইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে দলের অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করা।

এসব বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও তারা এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

সর্বশেষ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর জানুয়ারি মাসে দলের সুরা বৈঠকে নতুন করে বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছিল।

সেখানেও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক যুদ্ধকালীন জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। দলের ভেতরে সংস্কারের কথা বলেছিলেন। অন্য কোন বিকল্প না পেয়ে তিনি এও বলেছিলেন যে জামায়াত বিলুপ্ত করে দিন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তই আলোর মুখ দেখেনি।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করলেও পরবর্তীকালে বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নেয়ার কথা বলে। কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাদের ভূমিকার জন্য এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি।

সেই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে জামায়াতে বিভিন্ন সময় আলোচনা হলেও এ নিয়ে দুটো পক্ষ দাঁড়িয়ে যাওয়ায় তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়া, তাদের দলীয় প্রতীক হারানোয় দলটি এক ধরণের অস্তিত্বের সংকটের মুখে পড়ে। সেই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবও উঠে এসেছে।

কিন্তু তাদের কারও মত যে নাম পরিবর্তন করলেই নতুন প্রজন্মের জন্য ভাল হবে। আবার কেউ বলছেন নাম নিয়ে জনগণের সাথে জামায়াতের দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা।

তারমধ্যে যেসব নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি পেতে হয়েছে তাদের পরিবারের আবেগের কথা মাথায় রেখেও তারা নাম পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন না। সবমিলিয়ে এক ধরণের মতবিরোধ চলছে দলটির ভেতরে।
জামায়াতে ইসলামী: "পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার" জামায়াতে ইসলামী: "পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার" Reviewed by বার্তা কক্ষ on February 16, 2019 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.