ডেস্ক: বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে তার পিতা হত্যাকারী কিংবা হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুতকারীদের সঙ্গে রেখেছেন। কাউকে দোষারোপ করার আগে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য সেই সময় ইনু বাহিনীর ভূমিকা কি ছিল সেটি তদন্ত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, যারা ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিব হত্যাকা-ের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন, মুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন, মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন, শেখ মুজিব ছিলেন স্বৈরাচারী, যারা মুশতাক মন্ত্রিসভার শপথে গিয়েছিলেন, শপথ পরিচালনা করেছিলেন সেসব লোকরাই এখন শেখ হাসিনার নেতা-মন্ত্রী।
২৪শে আগস্ট সন্ধ্যায় লন্ডনের কুইনমেরী ইউনিভার্সিটির লেকচার থিয়েটারে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুক্তরাজ্য আয়োজিত ‘স্ট্র্যাটেজি ফর এ প্রসফারিয়াস বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
সভার শুরুতেই সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত তারেক রহমানের শিক্ষা ও গবেষণা উপদেষ্টা ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ পলিসি ফোরাম ক্যামব্রিজের সভাপতি মাহদী আমিনকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
তারেক রহমান বলেন, মুজিব হত্যাকা-ের সময়কার ঘটনা দেখা এবং জানার মানুষের সংখ্যা এখনও অনেকে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক রহমান বলেন, ১৪ই আগস্ট দিবাগত রাতে শেখ মুজিবের জ্ঞাতসারেই তিনটি ট্যাংক ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজপথে বেরিয়ে এসেছিল।
ইনু বাহিনীর হাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতেই এইসব ট্যাংক নামাতে বাধ্য হয়েছিলেন শেখ মুজিব। কারণ ১৫ই আগস্ট শেখ মুজিবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
তারেক রহমান প্রশ্নœœ করেন, রাজপথে ট্যাংক নামানোর মতো এই পরিস্থিতি তৈরি করলো কারা? কোন দল? কোন বাহিনী? তারেক রহমান বলেন, মুজিব হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা মুশতাক প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা সম্প্রতি এক সমাবেশে বলেছেন, মুশতাক আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার। কিন্তু সেই সময় শেখ মুজিব হত্যাকা-ের প্রেক্ষাপট যারা তৈরি করেছিলেন তারাই এখন হাসিনার দলে ও অবৈধ সরকারে।
তাহলে তো বলাই যায়, আওয়ামী লীগ আসলে কুলাঙ্গারদেরই দল। এই কুলাঙ্গাররাই এখন নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে জিয়া পরিবারকে টার্গেট করেছে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার ব্যাপারে তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগকে মুক্তাঙ্গনে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
কিন্তু মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ না করে দেড় ঘণ্টার নোটিশে কি উদ্দেশ্যে দলীয় সমাবেশের স্থান পরিবর্তন করেছিল? এটি প্রমাণ করে শেখ হাসিনা ওইদিনের হামলার ঘটনা সম্পর্কে জানতেন। তিনি ২১শে আগস্টের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত।
শেখ হাসিনা কেন জনসভার স্থান পরিবর্তন করেছিলেন সে বিষয়টি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এই মামলার বিচারকদের প্রতি অনুরোধ জানান তারেক রহমান।
প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তৃতায় তারেক রহমান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, শেখ মুজিব হত্যাকা-ের পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং ২১শে আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া তিনি একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
সেমিনারে তারেক রহমান বলেন, শেখ মুজিবের পরিবার খুনি পরিবার। শেখ মুজিব পাকিস্তান আমলে সংসদের তৎকালীন ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীকে সংসদ কক্ষে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। স্বাধীনতার পর ৩০ হাজার মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী শেখ মুজিব।
১৯৭৫ সালের ২রা জানুয়ারি আওয়ামী লীগই বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ার চালু করেছিল। ক্রসফায়ারে ভিন্নমতাবলম্বী সিরাজ সিকদারকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর শেখ মুজিব সংসদে দাঁড়িয়ে আইন আদালতের তোয়াক্কা না করেই বলেছিলেন, ‘কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার?’
শেখ মুজিব সম্পর্কে তিনি মার্কিন মাসিক রিডার্স ডাইজেস্ট ১৯৭৫-এর মে মাসের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পত্রিকটি লিখেছিল, ‘শেখ মুজিব দু’টি বেসামরিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল। একটি হচ্ছে তার ভাগ্নে শেখ মনির এক লাখ সশস্ত্র একগুঁয়ে যুবকের সংগঠন যুবলীগ, আর একটি হলো নিষ্ঠুর রক্ষীবাহিনী।’
তারেক রহমান বলেন, যারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তাদের জানা উচিত, মুজিব হত্যাকা-ের সময় বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও রাজনীতিতে ছিলেন না। শেখ মুজিব হত্যার পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেননি।
ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ নেতা মুশতাকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই। এরপর মুশতাকের পতন ঘটে সেটিও ছিল আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দখলের লড়াই।
এই অবস্থায় দেশ বাঁচাতে ৭ই নভেম্বর সংগঠিত হয় সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লব। ওই বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানকে সিপাহী জনতা সেনানিবাসে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে আনে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ৭৫ এর ৭ই নভেম্বর বাংলাদেশের সকল ক্রান্তিলঘেœ জিয়াউর রহমানই সাহসিকতার সঙ্গে দেশ ও জনগণের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ড. কে এমএ মালিকের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুক্তরাজ্যের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য, এডুকেশনালিস্ট নসরুল্লাহ খান জুনায়েদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে
আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ডক্টর এম আব্দুল মুমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কলামিস্ট জগলুল হোসেইন, তারেক রহমানের নবনিযুক্ত শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক উপদেষ্টা মাহদি আমীন, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন আহমেদ অসীম, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার ব্যারিস্টার তারেক বিন আজিজ।
উৎসঃ মানবজমিন অনলাইন।
ক্ষমতার জন্য পিতার খুনিদের সঙ্গে রেখেছেন হাসিনা
Reviewed by বার্তা কক্ষ
on
June 12, 2018
Rating:

No comments: