“তাদের যখন মন্ত্রীত্ব চলে যাবে, তখন কি তারা মোবাইল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিয়ে যাবেন?”

দেশের মাননীয় মন্ত্রীদের এবার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া হবে। সোমবার (২১ মে ২০১৮) বিষয়টি কেবিনেট মিটিংয়ে অনুমোদন করা হয়েছে। 

বলা হয়েছেÑ প্রত্যেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিব এই মোবাইল ফোন কেনা বাবদ ৭৫ হাজার টাকা করে পাবেন (আফসোস, উপমন্ত্রী আর এমপিগণ নেই এই তালিকায়)। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব অবশ্য জানিয়েছেন, আগে থেকেই টেলিফোন বাবদ মন্ত্রী-সচিবদের একটা বরাদ্দ ছিল, ২০০৪ সালে সেটা ছিল ১৫ হাজার, 

এখন বাড়িয়ে করা হলো ৭৫ হাজার। তবে টাকার অঙ্কটা যা-ই হোক, সেটা কিন্তু যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার, অর্থাৎ জনগণের পকেট থেকেই ।

কেবিনেট মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এখানে সকল মন্ত্রী উপস্থিত থাকেন। সে হিসেবে এটি সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক। 

এই বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো তাই রাষ্ট্রীয় জনগুরুত্বসম্পন্ন হবেÑ এটাই স্বাভাবিক। মন্ত্রী, সচিবদের এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন থাকাটা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, না হলে তারা প্রযুক্তির এ উন্নতির যুগে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলবেন কিভাবে?

কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা, কিছু বেয়াড়া টাইপ প্রশ্নও জাগছে মনে। তাহলে কি এতদিন মন্ত্রী সচিবদের কোনো এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট ছিল না? মন্ত্রী বা সচিবদের কাছে থেকে দেখার সুযোগ মাঝে মাঝে আমার হয়।

 আমি নিজে, গত ৫-৭ বছরে, এমন কোনো মন্ত্রী বা সচিবের দেখা পাইনি, যার হাতে এক বা একাধিক এন্ডয়েড সেট নেই।

 বরং দু’একজনকে পেয়েছি, যার হাতে একটি আইফোন আছে, কিন্তু সেটি দিয়ে ‘ধরা এবং করা’ ছাড়া আর কিছু তিনি জানেন না। তাহলে যাদের হাতে এরই মধ্যে এন্ড্রয়েড সেট আছে, তাদেরকেও কি ওই ৭৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে?

কেউ যদি নতুন সেট না কিনে তার পুরানোটাই ব্যবহার করতে চান, তিনিও কি টাকাটা নেবেন? কেউ যদি এরচেয়ে কম টাকায় সেট কেনেন, তিনি কি বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দেবেন? 

তাদের যখন মন্ত্রীত্ব চলে যাবে, তখন কি তারা এই সেটগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিয়ে যাবেন? কারণ, ফোনগুলো তো রাষ্ট্র দিচ্ছে মন্ত্রীকে, উনি যখন মন্ত্রী বা সচিব থাকবেন না, তখন সেটা ওনার হবে কি করে?

সর্বোপরি, ওনাদের কি টাকা পয়সার এতই অভাব যে একটা ফোন কেনার জন্য জনগণের টাকায় হাত দিতে হয়? 

তাহলে যে শুনি এবং দেখি একবার এমপি, মন্ত্রী বা সচিব হতে পারলে পরবর্তী তিন পুরুষের আর কিছু করতে হয় না, সেটা কি নির্জলা ভ্রান্তি? 

জনগণের টাকায় কেনা এই ফোনগুলোর নম্বর কি জনগণ জানতে পারবে? কোনো আমজনতা এই ন¤ারে কথা বলার কি সুযোগ পাবে?কেউ হয়তো পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, এরকম ছোট একটা বিষয় নিয়ে এত প্রশ্ন আমি কেন করছি?

 আচ্ছা, এই ছোট বিষয়টি নিয়ে মাননীয় মন্ত্রীগণ যদি কেবিনেটে আলোচনা করতে পারেন, তাহলে আমি কর প্রদানকারী একজন নাগরিক হিসাবে আমার অর্থ কোথায়, কিভাবে ব্যয় হচ্ছে সেটা জানতে চাইতে পারব না কেন?
লেখক : কলামিস্ট ও সাংবাদিক, সংবাদ উৎস- আমাদের সময়
“তাদের যখন মন্ত্রীত্ব চলে যাবে, তখন কি তারা মোবাইল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিয়ে যাবেন?” “তাদের যখন মন্ত্রীত্ব চলে যাবে, তখন কি তারা মোবাইল রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিয়ে যাবেন?” Reviewed by বার্তা কক্ষ on June 14, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.