বন্দি খালেদা জিয়ার চারপাশে ‘বিস্ফোরকের ডিপো’

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের কাছেই অবস্থিত নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছে বিএনপি।

রোববার সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “আমি গভীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতংকের সঙ্গে বলছি, আমাদের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা বেগম খালেদা জিয়াকে যে পরিত্যাক্ত কারাগারে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে তার চারপাশে রাসায়নিক বিস্ফোরকের ডিপো।”

দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া একবছর ধরে নাজিমউদ্দন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। সেখানে তিনিই একমাত্র বন্দি। 

গত বুধবার রাতের অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যে ভবন, চকবাজারের চুড়িহাট্টার সেই ওয়াহেদ ম্যানশন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের দূরত্ব মাত্র দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দাবি করেনে রিজভী।

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র প্রতিহিংসার লেলিহান অনলে দগ্ধ শেখ হাসিনা অবৈধ ক্ষমতার জোরে এমন একটি কেমিকেল বিস্ফোরকবেষ্টিত ভয়ংকর বারুদের ডিপোর মাঝখানে আতঙ্কজনক পরিবেশে দেশনেত্রীকে এক বছর বন্দী রেখেছেন।

“তাকে এক অশুভ উদ্দেশ্যে ভয়াবহ বিপজ্জনক পরিবেশে বন্দি করে রেখেছে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। আমাদের বক্তব্য এই মুহূর্তে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি নির্দোষ, এই মুহূর্তে তার মুক্তি চাই।”

৬৭ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া ওইদিনের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত সিলিন্ডার বিস্ফোরণে বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

আর স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও বলেছেন, আশপাশের দোকান আর ভবনে থাকা রাসায়নিক আর প্লাস্টিক-পারফিউমের গুদাম চুড়িহাট্টার আগুনকে দিয়েছে ভয়াবহ মাত্রা।

 অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া পাঁচটি ভবনের প্রায় প্রতিটিতে ছিল প্লাস্টিক দ্রব্য, রাসায়নিক কিংবা প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম। সেখানকার বিভিন্ন ভবনে পারফিউমের বোতল রিফিল করা হত, যেগুলো সেদিন বোমার মত ফেটেছে।
এমন পরিবেশে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে থাকার কথা স্থানীয়রাও জানিয়েছেন।

রিজভী বলেন, “অগ্নিকাণ্ডের দিন সারারাত চারদিকে বিকট শব্দ, মানুষের আর্তচিৎকার, রাসায়নিক বিস্ফোরণের ভয়ঙ্কর ও বিকট শব্দ গ্রাস করেছিল আশপাশের সকল এলাকা। তাকে (খালেদা জিয়া) ভয়ংকর রকমের একটি পরিবেশের মধ্যে রাখা হয়েছে। অল্প দুরত্বে নির্ঘুম উৎকণ্ঠায় কেটেছে চরম অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার।”

তিনি অভিযোগ করেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর শহীদ মিনারে যাওয়া উপলক্ষে রাত ১০টা থেকে আশপাশের রাস্তাঘাট সব বন্ধ করে দেওয়ার কারণে পুরান ঢাকার উর্দু রোড, চানখারপুল, নাজিমউদ্দিন রোডে প্রচণ্ড সৃষ্টি হয়েছিল।

“এতো জীবনহানিতে গভীর মর্মবেদনা ও দুঃখের কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল শহীদ মিনারের কর্মসূচির কিছুটা পরিবর্তন করে প্রশাসনকে আগুন নেভানোর কাজে সর্বাত্মক চেষ্টার নির্দেশ দেওয়া। তাদের এহেন দায়িত্বহীন আচরণের কারণে মানুষের মূল্যবান জীবন ঝরে গেছে।

“২০ ফেব্রুয়ারি রাতে যখন আগুন লাগে তখন ভয়াবহ যানজটের কারণে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হয়। অস্বাভাবিক যানজটে পড়ে অগ্নিনির্বাপন গাড়ির ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেরি হয়। ফলে চুড়িহাট্টার আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকেএবং ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, মীর আলী নেওয়াজ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

-bdnews24
বন্দি খালেদা জিয়ার চারপাশে ‘বিস্ফোরকের ডিপো’ বন্দি খালেদা জিয়ার চারপাশে ‘বিস্ফোরকের ডিপো’ Reviewed by বার্তা কক্ষ on February 24, 2019 Rating: 5

Post Comments

Powered by Blogger.