বাংলাদেশে বিরোধীদের উপর নির্মম দমন


২০১৮ সালের নির্বাচনে আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচকদের বিরুদ্ধে কঠোর দমন অভিযান চালিয়েছে সরকার। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১৭ জানুয়ারি প্রকাশিত তাদের ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে এ কথা বলেছে। 

দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সহিংসতা, নির্যাতন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এর শিকার হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মী, সাংবাদিক, বেসরকারী গ্রুপগুলোর সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে মারাত্মক নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিরোধী সদস্যদের উপর হামলা, ভোটারদের হয়রানি করা এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণ।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমার থেকে আসা যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের কারণে মানবিক ও সরকারী ত্রাণ সংস্থাগুলোর উপর মারাত্মক চাপ পড়েছে। 

সরকার শরণার্থী শিবিরে বিশেষ করে আশ্রয় ও শিক্ষা কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে বাধা দিয়েছে। তাদের যুক্তি হলো মিয়ানমারে ফিরে যাওয়াই শরণার্থী সমস্যার একমাত্র সমাধান। কিন্তু সেখানে তাদের জীবন ও স্বাধীনতার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, “আওয়ামী লীগ হয়তো নির্বাচনে জিতেছে, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করেছে এবং হাজার হাজার বিরোধী সমর্থকদের বিরুদ্ধে কল্পিত মামলা দিয়েছে। 

এটা মনে হয়েছে যে, ক্ষমতার কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তার নিজের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করতেও প্রস্তুত”।

৬৭৪ পৃষ্ঠার ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শতাধিক দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। সূচনা নিবন্ধে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কেনেথ রথ বলেছেন যে, অনেক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ পক্ষগুলো ঘৃণা ও অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর কারণে সে সব জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে। 

অধিকার সচেতন সরকার নাগরিক গ্রুপ ও জনগণের সমর্থন নিয়ে স্বৈরাচারিদের আচরণের বিষয়টি তুলে ধরেছে। তাদের সাফল্যের কারণে এমনকি কঠিন দুঃসময়েও মানবাধিকার রক্ষা সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশে নিরাপত্তা বাহিনী ‘মাদক বিরোধী যুদ্ধে’ শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেফতার করেছে। 

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের উপর ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা হামলা করেছে এবং আটকদের পুলিশী হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন খোঁড়া অজুহাতে শত শত বিরোধী দলীয় সমর্থকদের আটকে রাখা হয়েছে।

কালো আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার, প্রধানমন্ত্রী ও তার স্বজনদের সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমন চালানো হয়েছে। 

এদের একজন ফটোগ্রাফার-অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলম। আল জাজিরা টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাতকারে এবং ফেসবুকে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমালোচনা করায় তাকে গ্রেফতার করে ১০৭ দিন আটকে রাখা হয়েছিল।

কর্তৃপক্ষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমসহ মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে ব্যার্থ হয়েছে।
বাংলাদেশে বিরোধীদের উপর নির্মম দমন বাংলাদেশে বিরোধীদের উপর নির্মম দমন Reviewed by বার্তা কক্ষ on January 21, 2019 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.